বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২-এর পরিবর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনায় নতুন আইনের খসড়া আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনা পর্ষদকে অবহিত করেছে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। প্রস্তাবিত খসড়া অনুমোদিত হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এর পরিচালনা পর্ষদে কোনো আমলা থাকবে না। গভর্নর হবেন মন্ত্রী পদমর্যাদার। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে সংসদের অনুমোদন নিয়ে গভর্নর নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। এসব বিষয় যুক্ত করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে বিশেষ এ পর্ষদ সভার আয়োজন করা হয়। গভর্নরসহ ৯ সদস্যের পর্ষদের তিনজন বর্তমান সচিব এবং একজন সাবেক অর্থ সচিব। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রশ্নে খসড়া নিয়ে বৈঠকে কেউ দ্বিমত করেননি। তবে ভাষাগত কিছু বিষয়ে এবং গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরের মেয়াদ ছয় বছরের পরিবর্তে তিন বছর করার পরামর্শ দেন কেউ কেউ।
বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ২০২৫-এর খসড়া প্রণয়নে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে আইএমএফ। আইনি পরামর্শ দিচ্ছে ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এবং বিদেশি একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা অনুযায়ী, খসড়ার কপি ১৫ আগস্টের মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা এবং আইন উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানোর কথা। সেখান থেকে কোনো পরামর্শ এলে তা যুক্ত করে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে খসড়া চূড়ান্ত করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে কোনো পরামর্শ এলে তা যুক্ত করে এর পর অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। পুরো কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এর মানে, ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ এর মাধ্যমে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কেবল জাতীয় সংসদের কাছে জবাবদিহি করবে। আট সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে কোনো সরকারি কর্মকর্তা থাকবেন না। আট পরিচালকের মধ্যে গভর্নর হবেন চেয়ারম্যান। আর গভর্নর মনোনীত দুজন ডেপুটি গভর্নর থাকবেন। গভর্নরের দেওয়া তালিকা থেকে বাকি পরিচালক নিয়োগ দেবে সরকার। পরিচালক পদে যাদের নাম দেওয়া হবে, তাদের অবশ্যই অর্থনীতি, ব্যাংকিং, হিসাবরক্ষণ, অর্থ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং, বাণিজ্য, শিল্প ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অথবা আইনের মতো ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ছাড়াও আরও পাঁচটি আইন সংশোধন ও প্রণয়ন বিষয়ে আলোচনা হয়। আইনগুলো হলো– ব্যাংক কোম্পানি আইন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, আমানত বীমা আইন সংশোধন এবং খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায় অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন আইন প্রণয়ন। এ ছাড়া ইতোমধ্যে প্রণীত ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।