প্রায় চার দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের প্রভিডেন্স শহরের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এবং বিশ্বব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত মানবিক বিচারক ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও আর নেই। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভোগার পর গতকাল (২০ আগস্ট) তিনি ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
বিচারক ক্যাপ্রিও তাঁর জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘Caught in Providence’–এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন। ছোটখাটো ট্রাফিক মামলায় তিনি দয়া, সহানুভূতি ও মানবিকতা দিয়ে বিচার করতেন—যার ভিডিওগুলো টিকটক, ইউটিউব ও ফেসবুকে ভাইরাল হয় এবং কোটি কোটি দর্শক তাঁকে “দয়ালু বিচারক” হিসেবে ভালোবাসতে শুরু করে।
ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও ১৯৩৬ সালের ২৪ নভেম্বর রোড আইল্যান্ডের প্রসিডেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। একজন ইতালিয়ান অভিবাসী পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি ছোটবেলায় আর্থিক কষ্টের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। জীবনের শুরুতে জুতা পালিশ ও বাসন ধোয়ার কাজ করতেন, পরে শিক্ষকতা ও আইন পড়াশোনার মাধ্যমে বিচার বিভাগে প্রবেশ করেন। ১৯৮৫ সালে প্রভিডেন্স মিউনিসিপ্যাল কোর্টের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০২৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
“আমি আমার কোর্টে কেবল আইন নয়, হৃদয়ও ব্যবহার করি”—এমন দর্শনের জন্য বিচারক ক্যাপ্রিও ছিলেন ব্যতিক্রমী। একবার এক মা ও তার ছোট মেয়ের বিরুদ্ধে গাড়ির টিকিটের মামলায় শিশুটিকে বিচারক আসনে বসিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন—ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।
২০২৩ সালে তাঁর অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর থেকেই তিনি বিচারালয় থেকে অবসর নেন এবং সময় দেন পরিবারের সঙ্গে। তিনি ছিলেন প্রায় ৬০ বছরের সংসার জীবনের সঙ্গী, স্ত্রী জয়স ক্যাপ্রিওর সঙ্গে। তাদের পাঁচ সন্তান, সাত নাতি–নাতনি ও দুই প্রপৌত্র রয়েছে।
রোড আইল্যান্ডের গভর্নর ড্যান ম্যাককি এক বিবৃতিতে বলেন, “ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও ছিলেন এই অঙ্গরাজ্যের গর্ব। বিচার ব্যবস্থায় তার অবদান এবং মানবিকতা অবিস্মরণীয়।”
২০২৪ সালে তার নামে আদালতের একটি কক্ষ “Chief Judge Frank Caprio Courtroom” নামে নামকরণ করা হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ ফান্ড ও বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে তার অবদান প্রশংসিত।
ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিওর মৃত্যুতে আমেরিকা হারাল এক মহানুভব বিচারককে, যিনি প্রমাণ করে গেছেন—আইনের পাশাপাশি হৃদয় দিয়েও বিচার করা যায়।
শেষকৃত্য ও শ্রদ্ধাঞ্জলি: পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিচারক ক্যাপ্রিওর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে তাঁর প্রিয় শহর প্রভিডেন্সে, যেখানে তিনি তাঁর পুরো জীবন সমাজ ও মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন।