জাবি প্রতিনিধি,
সহকারী কম্পট্রোলার থেকে ডেপুটি কম্পট্রোলার পদে পদোন্নতি পেতে সম্প্রতি আবেদন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ। আর এতে তিনি জমা দিয়েছেন এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেয়া ভুয়া ডিগ্রি। বিষয়টি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরেও এসেছে। কিন্তু তারা সবাই নিরব৷ উল্টো ভুয়া ডিগ্রীর বিষয়টি পাশ কাটিয়ে ফিরোজ আহমেদকে পদোন্নতি দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন সবাই। শুধু তাই না, এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে তারা তদবিরও করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফিরোজ আহমেদ সম্প্রতি ডেপুটি কম্পট্রোলার হিসেবে পদোন্নতির জন্য আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ প্রসাশন-১ এ জমা দিয়েছেন।
জাতীয় দৈনিক ডেইলি সানে প্রকাশিত ‘Bogus Degree Galore’ প্রতিবেদনে বলা হয় আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে টাকা দিয়ে ডিগ্রি কেনা যায়। শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর এবং ইউজিসি জানায়, আইনজীবী,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকতা আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে টাকা দিয়ে ভুয়া ডিগ্রি কিনেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ে ও উচ্চ শিক্ষা কাউন্সিল ‘আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি’কে অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করেছে।

ফিরোজ আহমেদকে অফিসের কাজে বিঘ্ন না ঘটানোর শর্তে ২০০৫ সালের জুলাই মাসে সান্তা-মরিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে ভর্তি হবার অনুমতি প্রদান করে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন।এর পর ২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ক্রেডিট ট্রান্সফার করে আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন এর অনুমতি দেয়। পরে তিনি ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এমবি-এ ফাইনাল সেমিস্টার পরীক্ষায় বসার জন্য ছুটি চান এবং ছুটি নিয়ে আমেরিকান ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। যেখানে তার প্রধান বিষয় ছিল ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং। ডিগ্রি পাওয়ার প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের জুলাই মাসে তিনি একটি ইনক্রিমেন্ট এর জন্য আবেদন করেন। তবে তা গ্রহন না করে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে তার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে MBA গননা করবে বলে জানায়।
ডিগ্রি জালিয়াতি করে পদোন্নতির চেষ্টার বিষয়ে ফিরোজ আহমেদ জানান, আমার ডিগ্রি সঠিক। আমি এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাইনা। আপনার কিছু জানার থাকলে আমার অফিস প্রধানকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
ফিরোজ আহমেদের ডিগ্রীর বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কম্পোটোলার মোসানুল কবির জানান, আমেরিকান ওয়াল্ড ইউনিভার্ভিসি থেকে নেওয়া ফিরোজের ডিগ্রীর ভুয়া।আমাদের ইউজিসি এই ডিগ্রীকে স্বীকৃতি দেয়া নাই। তবে ফিরোজের পদোন্নতিতে সমস্যা নাই। তার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা আছে। তিনি আরও বলেন, অনেক সময় আমাদের কর্মকর্তারা আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য দুইটা মাস্টার্স করে। হয়ত সে ও এমন কোন কারনে করেছে।
যদি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি দিয়ে পদোন্নতি হয়, তাহলে একটা ভুয়া ডিগ্রী জমা দেওয়ার মতো অন্যায়ের কি ব্যবস্থা নেয়া হবে – জানতে চাইলে কম্পট্রোলার মোসেনুল কবির কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার(ভারপ্রাপ্ত) ও সাধারন প্রসাশন-১ এর প্রধান এবিএম আজিজুর রহমানকে কয়েক বার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন তোলেন নি।
এদিকে, পদোন্নতি কমিটিতে সভাপতি হিসেব আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.কামরুল আহসান, সদস্য হিসেব উপ-উপাচার্য প্রশাসন ড.সোহেল আহমেদ, উপ-উপাচার্য শিক্ষা ড.মাহফুজুর রহমান।এছাড়া উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যপক নাজমুল আলম, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শরিফুল হুদা, অফিস প্রধান হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কম্পট্রোলার মোসানুল কবির।আরও আছেন ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসমিনা রহমান ও সদস্য সচিব হিসেবে রেজিস্টার এ বি এম আজিজুর রহমান মুকুল।
ফিরোজ আহমেদের সার্টিফিকেট সত্যায়িতকারি ডেপুটি রেজিস্টার সাইফুল আলমকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন তোলেননি।
সাবেক কোষাধ্যক্ষ রাশেদা আক্তারের আস্থাভাজন হওয়ায় নিয়মের তোয়াক্কা না করে এর আগের নিজ কক্ষে এসি লাগান তিনি। পরবর্তিতে সংবাদ প্রকাশিত হলে তিনি এসি খুলতে বাধ্য হন।

উল্লেখ্য, ফিরোজ আহমেদের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাওয়ার পরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সাংবাদিকের মাধ্যমের সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।