নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’র সংজ্ঞায় ‘সেনা, নৌ এবং বিমানবাহিনী’ যুক্ত করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইনে এটি যুক্ত হলে তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবেন।
গতকাল সোমবার ইসির বৈঠকে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সেখানে সশস্ত্র বাহিনীকে সংজ্ঞাভুক্ত করা ছাড়াও কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা রাখা, ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের শাস্তির বিধান স্পষ্ট করা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার সম্পর্কিত সব বিধান বাদ দেওয়াসহ আরও কিছু প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। তবে এগুলো আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করার পর।
গতকাল ইসির বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের কাছে ইসির সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন। গত বৃহস্পতিবার আরপিওর সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে বৈঠক করেছিল ইসি। সেদিন আলোচনা মুলতবি করা হয়। গতকাল সকাল থেকে শুরু হয় মুলতবি আলোচনা। সন্ধ্যা সাতটার দিকে বৈঠক শেষ হয়। সশস্ত্র বাহিনীকে সংজ্ঞাভুক্ত করাসহ আরপিওতে বেশ কিছু সংশোধনী আনার সুপারিশ করেছিল নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তবে কমিশনের সব সুপারিশ হুবহু রাখা হয়নি।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ঐকমত্যের বিষয় জড়িত নয়, এমন বিষয়গুলো নিয়ে গতকাল ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে আরপিও–সংশ্লিষ্ট আরও কিছু বিধান আসতে পারে, ইসি সবটা বিবেচনায় রাখছে। ইসি আশা করছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিতে পারবে। এ ছাড়া ঐকমত্য কমিশনের কোনো সিদ্ধান্ত এলে এবং ইসিকে অনুরোধ করা হলে সেটা সংশোধনীর জন্য উপস্থাপন করা হবে।
ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এর আগে নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত এবং বাতিল নিয়ে ইসির ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছিল।
সেটা আবার পুনঃস্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অবস্থা বুঝে এক বা একাধিক ভোটকেন্দ্র বা পুরো আসনে নির্বাচন স্থগিত বা ফলাফল বাতিল করতে পারবে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, কমিশনের অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক এবং সংবাদকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীরা ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে। মাঝপথে বের হয়ে যাওয়া যাবে না।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, এ ছাড়া আইনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তির বিধান যুক্ত করা, কোনো আসনে একাধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে পুনর্নির্বাচন দেওয়া, প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় নিরীক্ষার বিষয় সুনির্দিষ্ট করা (ব্যত্যয় হয়েছে মনে করলে ইসি সেগুলোই অডিট করবে), দলের অনুদান ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ট্যাক্স রিটার্নে সেটা দেখানোর বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ আরও জানান, কোনো দল নিষিদ্ধ হলে তাদের নিবন্ধন বাতিল করার বিধান আছে। কিন্তু দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হলে কী হবে, তার বিধান সুনির্দিষ্ট নেই। এটি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর ইসি দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে।
হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে তদন্ত করে প্রার্থিতা বাতিল এবং নির্বাচিত হওয়ার পরেও (সংসদের মেয়াদ থাকাকালে) আইনের আওতায় আনার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। এসবের বাইরে আরও কিছু ছোটখাটো সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে বলে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ইসি সচিব আখতার আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।