অভিনয়ের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনেও সমান পারদর্শী সাইয়ামি খের। একদিকে বড় পর্দা ও ওয়েব সিরিজ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামঞ্চ—দুই ক্ষেত্রেই ছাপ রাখছেন বলিউড অভিনেত্রী। ‘স্পেশাল অপস ২’-এ তাঁর সাম্প্রতিক অভিনয় যেমন প্রশংসিত হয়েছে, তেমনি খেলাধুলার ময়দানেও তিনি লিখেছেন নতুন ইতিহাস; পরপর দুই বছর জিতেছেন ‘আয়রনম্যান ৭০.৩’ ট্রায়াথলন। প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন তিনি।
‘আয়রনম্যান ৭০.৩’ বিশ্বের অন্যতম কঠিন সহনশীলতা প্রতিযোগিতা। এখানে প্রতিযোগীদের ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার সাঁতার, ৯০ কিলোমিটার সাইক্লিং এবং ২১ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করতে হয়। সব মিলিয়ে ৭০.৩ মাইল, যা জয় করতে লাগে অবিশ্বাস্য মানসিক দৃঢ়তা ও শারীরিক সহনশীলতা। ২০২৪ ও ২০২৫—দুই বছরই সফলভাবে এই কঠিন পরীক্ষা পেরিয়েছেন সাইয়ামি।

সাইয়ামি খের। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
নিজের প্রেরণার কথা বলতে গিয়ে সাইয়ামি ভারতের গণমাধ্যম নবভারত টাইমসকে বলেন, ‘আত্মিক শান্তি খোঁজার ইচ্ছা থেকেই খেলাধুলার দিকে ঝুঁকেছিলাম। আমরা যে অঙ্গনে কাজ করি, সেখানে অনেক সময় পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে ওঠে। নেতিবাচক মন্তব্য, হতাশা—এসবের মধ্যে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে দরকার হয় মানসিক শক্তি। খেলাধুলাই আমাকে সেই শক্তি দিয়েছে।’ অনেকে হয়তো জানেন না, অভিনয়জীবনের আগেই খেলাধুলার সঙ্গে সাইয়ামির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিজের প্রথম ছবি ‘মির্জা’ মুক্তির পর একটি ম্যারাথনে অংশ নেন তিনি। সেটিই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। দীর্ঘ কয়েক বছর ‘আয়রনম্যান’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য ২০২২ সাল থেকে কঠোর অনুশীলন শুরু করেন। প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা শারীরিক প্রস্তুতি, পাশাপাশি মানসিক দৃঢ়তার অনুশীলন।

আয়রনম্যানে সাইয়ামি খের। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, সাইক্লিং, অ্যাথলেটিকস বা যে খেলাই হোক, দক্ষতা দেখিয়েছেন সাইয়ামি। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা তাঁর জীবনের অংশ। তাঁর পরিবারও খেলাধুলাপ্রেমী। বিনোদন জগতের সঙ্গে জড়িয়ে মা উত্তরা খের ১৯৮২ সালে ‘ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া’ হয়েছিলেন, আর বাবা অদ্বৈত খের মডেল ছিলেন। সব মিলে পারিবারিক ঐতিহ্যই আজকের সাইয়ামিকে গড়ে তুলেছে।সাইয়ামির মতে, নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রমাণ করতে পুরুষদের দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হয়। তিনি বলেন, ‘করপোরেট চাকরি, সাংবাদিকতা বা অভিনয়—সব ক্ষেত্রেই মেয়েদের বেশি পরিশ্রম করতে হয়। দুনিয়া এখনো পুরুষপ্রধান, এটা কঠিন সত্য। তবে আমি ইতিবাচক দিকও দেখি। এখন অনেক কিছুরই পরিবর্তন হচ্ছে।’
অভিনয়জীবনে খেলাধুলা কী প্রভাব ফেলেছে?

সাইয়ামি খের। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
এ প্রশ্নে সাইয়ামি বলেন, ‘খেলাধুলা আমার অভিনয়ে কেবল ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শৃঙ্খলাবোধ, কঠিন পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা, প্রাণশক্তি—সবই আমাকে দিয়েছে খেলাধুলা। হার-জিত আর প্রত্যাখ্যানকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, সেটাও খেলাধুলা থেকে শিখেছি।
নিজেকে কোনো নির্দিষ্ট ধাঁচে আবদ্ধ রাখতে চান না সাইয়ামি খের। ‘মির্জা’ থেকে ‘ঘুমর’, কিংবা যেকোনো ওয়েব সিরিজ—প্রতিটি চরিত্রে চেষ্টা করেছেন ভিন্নতা আনার। তাঁর কাছে অভিনয় প্রথম প্রেম আর খেলাধুলা হলো প্রিয় শখ। এই দুই ক্ষেত্রের মধ্যে সমতা বজায় রাখাই তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র।